দেশব্যাপী করোনা সংক্রমন তো আছেই, তার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। রোগীদের মধ্যে বড়দের পাশাপাশি বাচ্চারাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগের সবচে বড় সমস্যা হল প্লেটলেট কমে যাওয়া। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের খুব দ্রুত প্লেটলেট কমে যায়। তাই এই জ্বরে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। ডেঙ্গু জ্বরে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য গ্রহণ পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা। ডেঙ্গু দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য ডায়েটে থাকতে হবে যে সব খাবার-
প্লেটলেটের মাত্রা বাড়াতে-
ডেঙ্গু জ্বরে খুব দ্রুত প্লেটলেট কমে যায়। তাই প্লেটলেট বাড়াতে সহায়ক খাবার গুলো এই সময় বাছাই করা দরকার। পালং শাক, কুমড়া, গাজর, সেলারি, ব্রোকলি, বিট, ক্যাপসিকাম, পেঁপে পাতা প্লেটলেট বাড়াতে সহায়তা করে।
পানিশূন্যতা এড়াতে-
জ্বরে শরীরের পানির অভাব দেখা দেয়। তাই শরীরে পানির পরিমাণ বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর ডেঙ্গু রোগীকে তরল খাবার দেওয়া যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে যে তরল খাবার গুলো উপকারি তা হল- দুধ, ডাবের পানি, পেঁপের রস, কমলা রস ,ডালিম রস, লেবুর শরবত , মাল্টা জুস, ফ্রেশ জুস ইত্যাদি।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে–
ডেঙ্গু রোগীদের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়াতে আয়রন ও ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। কলিজা, ডিমের কুসুম,মাছ, কচুশাক, পালংশাক, খেজুর, আনার, কলা, স্ট্রবেরি, গাজর, টমেটো, কচু, লতা, ব্রোকলি, সাইট্রাস ফল ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে এবং দুধ, ডিম, বাদাম,বীচি, গরুর মাংস, কলা ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন-বি থাকে, যা হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়াতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে –
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার মূলত মানুষের শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে কোষ গুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাচায় এবং জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। পালংশাক, রঙ্গিন বাঁধাকপি, ব্রোকলি, টমেটো,বিট, সবুজ শাকসবজি, লাল আঙ্গুর, সবুজ-চা, ডার্কচকলেট ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়াতে সহায়তা করে। তাছাড়া প্রোবায়োটিক মূলত শ্বাসযন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইনটেসটিন্যাল সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। এটি শরীরে অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে তরান্নিত করে । প্রোবায়োটিক পাওয়া যায় যে সব খাবারে তা হল- দই, দধি, টকদই, চীজ, গাঁজনকৃত বাঁধাকপি, বুরহানি , আচার ইত্যাদি।
সাইট্রাস খাবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে। যেমন- লেবু, কমলা,মাল্টা, জাম্বুরা ইত্যাদি। তাছাড়া রসুন, হলুদ, আদা, ভেষজ চা, লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে প্রোটিন –
প্রোটিন ক্ষয় পুরন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। উৎস। লিন প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও টিস্যু দ্রুত সুস্থ হওয়া তথা নতুন টিস্যু তৈরিতে সহায়তা করে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য মটরশুটি, ছোলা, মসুর ডাল, ডিম,মাছ, কলিজা, দুধ, দই, কাজুবাদাম প্রোটিনের ভালো উৎস। ।
টিপস-
আদার পানি-বমি ভাব কমায়, এতে ডেঙ্গুর প্রভাব মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও তরল রয়েছে।
জ্বরের সময় গোসল করা কেবল আরামদায়ক নয় বরং শরীরের তাপমাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।
পেঁপে পাতা, থানকুনি পাতা, নিম পাতা, ছাগলের দুধ -ডেঙ্গু জ্বরে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
জ্বরের সময় কম মসলায় রান্না করা নরম ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিৎ।
সবসময় ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও ঘুমের সময় মশারি ব্যাবহার করা উচিৎ।
ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই তৈলাক্ত খাবর, ভাজা খাবর, মসলাযুক্ত খাবার, ক্যাফিনযুক্ত ও কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এই খাবারগুলো খেলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই ধরনের খাবার খেলে হজমে ও পাকস্থলীতে সমস্যা হতে পারে। ডেঙ্গু রোগে খাবারের পাশাপাশি ঔষধ সেবন করা অত্যন্ত জরুরী।
পথ্য-পুষ্টিবিদ- সৈয়দা শিরিনা (স্মৃতি)
সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান এবং ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট
এবং বিভাগীয় প্রধান, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড, ঢাকা।